ভোলায় আইসিবিসি প্রকল্পে কোটি টাকার অনিয়ম: দুর্নীতির খবর প্রকাশে সাংবাদিককে মামলার হুমকি মাঠপর্যায়ে অনুপস্থিত সেবা, কাগজে-কলমে ব্যয় তিন কোটি টাকা।
আব্দুল মান্নান, ভোলা প্রতিনিধি।
ভোলায় শিশু বিকাশ ও সাঁতার শেখানো প্রকল্পে (আইসিবিসি) ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র সংবাদে প্রকাশ করায় সাংবাদিককে মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।‘ভোলায় শিশুবিকাশ ও সাঁতার শেখানো প্রকল্পে চলছে লুটপাট’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ হুমকি দেওয়া হয়। দৈনিক বাংলাদেশ বাণী পত্রিকার নিজস্ব প্রতিনিধি মেসকাত আহাম্মদকে গত রবিবার ভোলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে প্রকল্পের ইউনিয়ন সুপারভাইজার মো. শাহিনের কম্পিউটার দোকানে নিয়ে এ হুমকি দেন জেলা প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মো. হারুন। এ ঘটনার অডিও রেকর্ডও রয়েছে বলে জানা গেছে।ভুক্তভোগী সাংবাদিক মেসকাত আহাম্মদ জানান, প্রায় দুই মাস আগে তিনি প্রকল্পে অনিয়মের খোঁজ পান। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ আগস্ট তিনি সংবাদ প্রকাশ করলে আদালতের সামনে তাঁকে মামলার ভয় দেখানো হয়। বিষয়টি সদর থানার ওসি আবু শাহাদাৎ মো. হাছনাইন পারভেজকে মৌখিকভাবে জানালে তিনি লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান সাংবাদিক।প্রকল্পের পটভূমিমহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দেশের উপকূলীয় ১৬ জেলার ৪৫ উপজেলায় ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু যত্নকেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান’ প্রকল্প চালু হয়। প্রায় ২৭১ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এনজিও সংস্থা ‘পদক্ষেপ’।ভোলার সদর, লালমোহন ও মনপুরা উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় কাগজে-কলমে চালু হয়েছে ৫০০ শিশু যত্নকেন্দ্র। সেখানে এক থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সি মোট ১২ হাজার ৫০০ শিশু নিবন্ধিত রয়েছে বলে দেখানো হয়। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, খোলা দিনে অধিকাংশ কেন্দ্রে কোনো শিশু উপস্থিত নেই। এমনকি কিছু কেন্দ্রের অস্তিত্বই নেই।মাঠপর্যায়ের চিত্রসরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি যত্নকেন্দ্রে একজন যত্নকারীকে মাসে ৪ হাজার টাকা ও সহকারী যত্নকারীকে ১ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। এছাড়া সুপারভাইজারদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণের ভাতাও ছিল প্রতিদিন ৫০০ টাকা। কিন্তু অভিযোগ আছে—তিন দিনের প্রশিক্ষণকে সাত দিন দেখানো হলেও ভাতা দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা।শুরুর কয়েক মাস প্রকল্পের কার্যক্রম কিছুটা সচল থাকলেও পরবর্তীতে বেতন-ভাতা বণ্টনে ব্যাপক অনিয়ম শুরু হয়। অনেক কেন্দ্র সচল না থাকলেও তাদের নামে মাসে নিয়মিত টাকা তোলা হয়েছে। যেসব কেন্দ্র চালু আছে, সেগুলোও সময়মতো পূর্ণ বেতন পায়নি। অভিযোগ রয়েছে—বেতন পেতে হলে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কমিশন দিতে হয়েছে।এছাড়া যত্নকেন্দ্রগুলোর জন্য ফ্যান, বোর্ড, খেলনা, বই, ডাস্টবিনসহ নানা উপকরণ বরাদ্দ থাকলেও সেগুলো পৌঁছায়নি। সাঁতার শেখানোর কার্যক্রমও অধিকাংশ স্থানে দৃশ্যমান নয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৯ মাসে শুধু ভোলা জেলার প্রকল্প থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।সাংবাদিক সমাজের উদ্বেগএকটি সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিককে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক মহলে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
					